শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
রাজনীতিতে যুক্ত, ছাত্রাবাসে অনুপ্রবেশ, দখল, মারধরসহ শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ৭৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে ১৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকও রয়েছেন।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে সাতজনকে দুই বছরের জন্য, ১৫ জনকে দেড় বছরের জন্য, ৩৯ জনকে এক বছরের জন্য এবং ১৪ জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১১ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার চমেক অধ্যক্ষ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এসব বিষয় জানানো হয়েছে।
সোমবার থেকেই বহিষ্কারের আদেশ কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। আদেশের অনুলিপি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ কয়েকটি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, নানা মেয়াদে বহিষ্কার করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদেরকে এর আগেও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে একাধিকবার বহিষ্কার করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের তালিকায় থাকা আসেফ বিন তাকি, রিয়াজুল ইসলাম জয়, অভিজিৎ দাশ, মাহমুদুল হাসান, শামীম আহমেদ ভূঁইয়া, ফয়সাল আহমেদ, সৌরভ দেবনাথসহ শাস্তিপ্রাপ্তদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে চমেক ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। একাডেমিক কাউন্সিলের আদেশে ছাত্রাবাসে অবৈধ প্রবেশ, কক্ষ দখল, মারধর, নিষিদ্ধ থাকার পরও রাজনীতিতে যুক্ত থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তাসলিম উদ্দীন বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে এসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে একাডেমিক কাউন্সিল। অভিযুক্ত ৭৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকও রয়েছেন। এদের শাস্তি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
বহিষ্কার আদেশের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের যথেচ্ছাচারী আচরণের কারণে কলেজের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাস সমূহে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ইতিপূর্বে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কলেজ এলাকায় সংঘটিত সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাসহ বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য এবং ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়। এমতাবস্তায় এই সকল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, রুম দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিধি মোতাবেক বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পরিচালক মহোদয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চমেক কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয় নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. হাসানুজ্জামানকে। এক মাসের বেশি সময় ধরে অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন কমিটির সদস্যরা। এর আগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নানা অভিযোগ জমা দেন। আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা, ছাত্রাবাসে অবৈধ প্রবেশ, হল দখলসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে কমিটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট অনেকের বক্তব্য নেওয়াসহ নানা তথ্য-প্রমাণও সংগ্রহ করেন।